Search
Cart 0.00
0
0
সাবটোটাল: 0.00
No products in the cart.
Search

স্প্যানিশ ভাষী দেশ কয়টি?

স্প্যানিশ ভাষা বিশ্বজুড়ে বহুল প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি কেবল ভাষা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, স্প্যানিশ ভাষা তার প্রভাব বিস্তার করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঠিক কতটি দেশে স্প্যানিশ ভাষা সরকারিভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সেই দেশগুলির ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট কীভাবে স্প্যানিশ ভাষার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

স্প্যানিশ ভাষার উৎপত্তি ও ইতিহাস

স্প্যানিশ ভাষার উৎপত্তি রোমান সাম্রাজ্যের সময়। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, ইবেরিয়ান উপদ্বীপে লাতিন ভাষার পরিবর্তনের মাধ্যমে স্প্যানিশ ভাষার বিকাশ ঘটে। ১৫শ ও ১৬শ শতাব্দীতে স্প্যানিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের সময়, স্প্যানিশ ভাষা আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যায়।

স্প্যানিশ ভাষী দেশসমূহের তালিকা

স্প্যানিশ ভাষা বর্তমানে ২২টি দেশের সরকারিভাবে স্বীকৃত ভাষা। এই দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া (যেখানে কেচুয়া ও আইমারা ভাষার সাথে সহসরকারী), চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টা রিকা, কিউবা, ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েডর, এল সালভাদোর, নিরক্ষীয় গিনি (যেখানে ফরাসি ভাষার সাথে সহসরকারী), গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, পানামা, প্যারাগুয়ে (গুয়ারানি ভাষার সাথে সহসরকারী), এবং পেরু (যেখানে কেচুয়া ভাষার সাথে সহসরকারী) অন্তর্ভুক্ত। এই দেশগুলোর প্রতিটি স্প্যানিশ ভাষাকে তাদের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

স্পেন

স্পেন হলো স্প্যানিশ ভাষার উৎপত্তিস্থল, এবং এই দেশে একাধিক উপভাষার প্রচলন রয়েছে, যার মধ্যে কাস্তিয়ান স্প্যানিশ প্রধান। স্প্যানিশ ভাষার প্রভাব স্পেনের ইতিহাস, শিল্প, এবং সংস্কৃতির ওপর গভীরভাবে বিরাজমান। স্পেনের সাহিত্য থেকে শুরু করে স্থাপত্য, সঙ্গীত, এবং চিত্রকলায় স্প্যানিশ ভাষার প্রতিফলন স্পষ্ট। কাস্তিয়ান স্প্যানিশের পাশাপাশি গ্যালিশিয়ান, কাতালান, এবং বাস্ক ভাষার মতো অন্যান্য ভাষা এবং উপভাষাও এখানে প্রচলিত, যা স্পেনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

স্পেনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য যেমন আলহাম্ব্রা প্যালেস, সাগরাদা ফ্যামিলিয়া এবং স্পেনের বিখ্যাত সাহিত্যিক মিগুয়েল দে সার্ভান্তেসের ‘ডন কিহোতে’ স্প্যানিশ ভাষার অপরিসীম প্রভাবকে ফুটিয়ে তোলে। স্প্যানিশ ভাষা এবং এর উপভাষাগুলো স্পেনের প্রতিটি অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত, যা এই দেশটির সৃজনশীল প্রকাশে বিশাল অবদান রেখেছে।

মেক্সিকো

মেক্সিকো হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্প্যানিশ ভাষাভাষী জনসংখ্যার দেশ। দেশটির জনসংখ্যা ১২ কোটিরও বেশি, যার অধিকাংশই স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। মেক্সিকোর স্প্যানিশ ভাষা দেশটির স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্রণে একটি অনন্য রূপ নিয়েছে।

মেক্সিকোর প্রাচীন সভ্যতা যেমন মায়া এবং অ্যাজটেকদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই ভাষায় প্রতিফলিত হয়েছে। মেক্সিকোর খাবার, সংগীত, এবং চলচ্চিত্র শুধু দেশীয় নয়, বরং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। মেক্সিকান খাবারের মধ্যে টাকো, এনচিলাদা, এবং গুয়াকামোলের মতো বিখ্যাত ডিশগুলো আজ সারা বিশ্বের মানুষ পছন্দ করে।

মেক্সিকোর সংগীতের ক্ষেত্রেও স্প্যানিশ ভাষার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। মারিয়াচি, বাল্লাদো, এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান সংগীত স্প্যানিশ ভাষার ছন্দে ও সুরে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। মেক্সিকোর চলচ্চিত্র শিল্পও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এখানে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমাদৃত হয়েছে।

মেক্সিকোর স্প্যানিশ ভাষার এই বিশেষ রূপ দেশটির আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তৈরি করেছে, যা দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনায় স্প্যানিশ ভাষার যে রূপটি প্রচলিত, তা ভোসেয়ো নামে পরিচিত। ভোসেয়ো আর্জেন্টিনার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশটির ভাষাগত পরিচয়ের অনন্য দিককে প্রতিফলিত করে। এই রূপটি মূলত দ্বিতীয় ব্যক্তি একবচনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আর্জেন্টিনার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্নতায় পাওয়া যায়।

ভোসেয়ো শুধুমাত্র একটি ভাষাগত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং এটি আর্জেন্টিনার সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক, যা স্থানীয় জনগণের কথ্য ভাষার একটি বিশেষ ধারা হিসেবে বিবেচিত হয়। আর্জেন্টিনার ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং উপভাষার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়, স্থানীয় ইতিহাস, এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

তাছাড়া, আর্জেন্টিনার তাঙ্গো নাচ এবং গাউচো জীবনধারা স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। তাঙ্গো, যা আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে ১৯ শতকের শেষ দিকে উদ্ভব হয়, সেই সময় থেকে স্প্যানিশ ভাষায় প্রচলিত গানের লিরিক্স, সুর, এবং তালের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঙ্গো শুধুমাত্র একটি নাচ নয়, এটি একটি আবেগ, যা প্রেম, দুঃখ, এবং অভিজ্ঞান প্রকাশ করে।

গাউচো জীবনধারা আর্জেন্টিনার পাম্পাস এলাকার রাখালদের জীবনযাপন পদ্ধতি, যা মূলত ষাঁড় পালন এবং কৃষিকাজের সাথে সম্পর্কিত। গাউচোদের জীবনধারা স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে তাদের গান, কবিতা, এবং লোককথার মাধ্যমে ফুটে ওঠে। গাউচো সংস্কৃতি আর্জেন্টিনার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং দেশটির জাতীয় পরিচয়ের একটি বড় অংশ গঠন করেছে।

এই সমস্ত সাংস্কৃতিক উপাদান স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে শুধু আর্জেন্টিনায় নয়, বরং সারা বিশ্বে আর্জেন্টিনার সংস্কৃতিকে পরিচিত করেছে। স্প্যানিশ ভাষার ভোসেয়ো রূপটি আর্জেন্টিনার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং সামাজিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা এই দেশটির ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়কে অনন্য করে তুলেছে।

কলম্বিয়া

কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান স্প্যানিশ ভাষাভাষী দেশ, যেখানে স্প্যানিশ ভাষা শুধু কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের সাহিত্য, শিল্প, ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। কলম্বিয়ার সাহিত্য জগতে স্প্যানিশ ভাষার গভীর প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বখ্যাত লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস কলম্বিয়ার সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করে তুলেছেন। তাঁর ম্যাজিক রিয়ালিজম ধারায় লেখা উপন্যাসগুলো, যেমন “ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড,” স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পাঠকদের মন জয় করেছে।

কলম্বিয়ার শিল্পকলা, বিশেষত চিত্রকলা ও সঙ্গীত, স্প্যানিশ ভাষার শক্তিশালী প্রভাব বহন করে। এখানকার পেইন্টারদের মধ্যে অনেকেই তাদের কাজের মাধ্যমে সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে অভিব্যক্ত হয়েছে। এছাড়াও, কলম্বিয়ার সঙ্গীত, বিশেষত ভ্যালেনাটো এবং কুম্বিয়া, স্প্যানিশ ভাষার ছন্দ ও সুরে গড়ে উঠেছে এবং দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।

স্প্যানিশ ভাষা কলম্বিয়ার মানুষের জন্য শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতো সাহিত্যিক এবং কলম্বিয়ার অন্যান্য সৃজনশীল শিল্পীদের কাজ স্প্যানিশ ভাষার সৌন্দর্য এবং গভীরতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে।

অন্যান্য স্প্যানিশ ভাষী দেশ

স্পেন এবং লাতিন আমেরিকার বাইরেও কিছু দেশ রয়েছে যেখানে স্প্যানিশ ভাষা সরকারিভাবে ব্যবহৃত হয়।

  • গিনি ইকুয়েটোরিয়াল
    এই আফ্রিকান দেশটিতে স্প্যানিশ, ফরাসি, এবং পর্তুগিজ ভাষা প্রচলিত। স্প্যানিশ এখানে একটি প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

  • ফিলিপাইনস
    ফিলিপাইনসের ইতিহাসে স্প্যানিশ ভাষার গভীর প্রভাব রয়েছে, যদিও এখন এটি সরকারি ভাষা নয়। এখানকার বেশিরভাগ পুরনো নথি স্প্যানিশ ভাষায় লেখা।

উপসংহার

স্প্যানিশ ভাষা শুধুমাত্র একটি ভাষা নয়; এটি একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত হয়েছে। ভাষাটি কেবল স্পেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এবং এমনকি এশিয়ার কিছু অংশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। প্রতিটি অঞ্চলে স্প্যানিশ ভাষা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ইতিহাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে একটি বিশেষ ধারা তৈরি করেছে।

স্প্যানিশ ভাষার বিস্তার একাধিক মহাদেশে, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকায়, উপনিবেশবাদের সময়ে শুরু হয়। স্পেনীয় সাম্রাজ্য তাদের ভাষাকে নতুন দখলকৃত অঞ্চলে প্রবর্তন করে, যা পরবর্তীতে ঐসব অঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এক অনন্য রূপ নেয়।

স্প্যানিশ ভাষার বৈচিত্র্যময় প্রভাব একাধিক দেশের সামাজিক জীবন, শিল্পকলা, এবং সাহিত্যিক জগতে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, এবং কলম্বিয়ার মতো দেশগুলিতে স্প্যানিশ ভাষার বিভিন্ন রূপ দেখা যায়, যা তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আর্জেন্টিনায় ভোসেয়ো নামে পরিচিত একটি বিশেষ ধারা রয়েছে, যা তাদের ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

 

ডিজিটাল বাংলা স্কুল ব্লগে আপনাদেরকে স্বাগতম। আমাদের ব্লগ পোস্টে আরও তথ্য পেতে এবং গাইড পেতে থাকুন। ধন্যবাদ!

 

 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

কাস্টমার ফর্ম ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার